সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

পাত্রপক্ষ

আননোন নম্বর থেকে কল। নিতান্ত অনিচ্ছা নিয়ে রিসিভ করলাম। অপর প্রান্ত থেকে একটা কন্ঠ ভেসে আসলো, “অন্তু, আমি তোমার সুজনদা। চিনতে পারছো?”
সুজনদা! উনার সাথে পরিচয় হয়েছিল গত বছরে ঢাকা ভার্সিটিতে একটা বিতর্ক প্রতিযোগীতায় যেয়ে। উনার রুমে ছিলাম আমরা। এক দিনেই বেশ ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল উনার সাথে।  ফোন চেঞ্জ করে অনেকের সাথে সাথে উনার নম্বরটাও হারিয়েছি
সে যাইহোক, আজ এতদিন পর হঠাত কি মনে করে ফোন করলেন উনি?
আমি কথা বলতে শুরু করলামঃ

আমিঃ ও! সুজনদা! হ্যা দাদা, বলেন
কেমন আছেন?
সুজনুদাঃ এই আছি আরকি। তুমি?
আমিঃ এইতো দাদা। চলছে। তারপর
কি অবস্থা আপনার?
সুজনদাঃ ঐ আর কি। ভাই, একটা বিষয়ে তোমার একটু হেল্প দরকার ছিল। করতে পারবা?
আমিঃ হ্যা হ্যা...অবশ্যই। কি হেল্প
? বলেন?
সুজনদাঃ একটা মেয়ে সম্পর্কে কিছু ইনফরমেশন দরকার ছিল। দিতে পারবে?
আমিঃ কোন মেয়ে দাদা?
সুজনদাঃ তনু নামে মেয়েটাকে চেনো? তোমার ইমিডিয়েট জুনিয়র। চেনারতো কথা। তোমার ফ্যাকাল্টিতেই পড়ে।
আমিঃ ওহ আচ্ছা! হ্যা, ওকে চিনিতো। ভালভাবেই চিনি। কেন দাদা? কোন বিয়ে টিয়ের ব্যপার নাকি?
সুজনদাঃ হ্যা ওই আরকি... আমার দাদা
সাথে... বিয়ের কথা হচ্ছে। মেয়ের ফ্যামিলিতো ভাল। কিন্তু মেয়ে কেমন এইটা জানা দরকার।
আমিঃ ওহ আচ্ছা। ভালইতো। কিন্তু, মেয়ের বিয়ে করার ইচ্ছে আছে বলেতো মনে হয় না। আমি যতদূর জানি, ওর এখনই বিয়ে করার ইচ্ছে নাই।
সুজনদাঃ সেইটাতো সমস্যা না। মেয়ের ফ্যামিলি এক পায়ে খাড়া। আর সব মেয়েই ওরকম বলে। আমি আসলে জানতে চাচ্ছিলাম যে, মেয়েটা আসলে কেমন। ফ্র্যাংক্লি যদি একটু বলতে আরকি। ক্যাম্পাসে চলাফেরা কেমন করে, বন্ধু বান্ধব কেমন, এই সব আরকি।
আমিঃ ওরতো অ্যাফেয়ার থাকার কথা।
সুজনদাঃ মেয়ের মা বললো যে, বাচ্চা বয়েসে ভুল করে ছেলে মেয়েরা। কারোর সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে এখন অবশ্যই নেই। থাকলে তারা ছেলে দেখবে কেন? কিন্তু, আসল কথা কি, আমার দাদাতো ডাক্তার। এরকম ছেলে হাতে পেয়ে যে কেউ এরকম বলতেই পারে। আর সম্বন্ধটা ছাড়তেও চাচ্ছি না। আরও কিছু বিষয় আছে।
আমিঃ কেমন?
সুজনদাঃ ঐ আছে কিছু। মেয়ের ফ্যামিলি অনেক বড়লোক আর এই আরকি......। সে যাই হোক।  তুমি ভাই মেয়ের স্বভাব চরিত্র কেমন শুধু এইটা বলো।
আমিঃ কি আর বলি। আপনার সাথেতো আসলে একদিনেই অনেক ক্লোজ হয়ে গেছিলাম। আপনি নিজের মানুষই বলতে পারেন। আপনার ভায়ের বিয়ে বলে কথা। আমি আসলে মিথ্যা বলতে চাচ্ছি না।
সুজনদাঃ না না। মিথ্যা কেন বলবা? যা সত্যি তাই বলো।
আমিঃ সত্যি বলতে কি, এই মেয়েকে আমার কাছে একদমই সুবিধার মনে হয় না।
সুজনদাঃ কেন?
আমিঃ প্রথম কথা, মেয়ে নাচে। স্টেজ পারফর্ম করে বেড়ায়। সবই আবার কমার্শিয়াল ড্যান্স।
সুজনদাঃ তাই নাকি? মেয়ে নাচে? কমার্শিয়াল ড্যান্স মানেতো ছেলেদের সাথে...আধুনিক গানের সাথে...তাই না?
আমিঃ হ্যা। পাবলিক খায় বেশি, তাই। আমার কাছে ওর নাচের অনেক ভিডিও আছে। দেখতে পারেন।
সুজনদাঃ তাই নাকি? সবার কাছে ওর ভিডিও আছে?
আমিঃ হ্যা, সবার কাছে। আর কি বলবো, এই মেয়েকে সারাদিন ছেলেদের সাথেই দেখি। বিশাল গ্রুপ নিয়ে আড্ডা দিয়ে বেড়ায়
জোড়ে জোড়ে কথা বলে। আমার মনে হয় না, এই মেয়ের মধ্যে একটা সংসার সামলানোর মত যোগ্যতা আছে। খুবই বহির্মূখী স্বভাবের মেয়ে।
সুজনদাঃ বলো কি? জবর কথাতো! না না তাহলেতো চিন্তা করতে হয় নতুন করে।
আমিঃ হুম। আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি জানতে চান, তাহলে বলবো, এই মেয়ে আপনার দাদার বউ হওয়ার উপযুক্ত না। মেয়ের ফ্যামিলি যত বড়লোকই হোক না কেন। ডাক্তার ছেলের জন্য মেয়ের অভাব হবে বলে মনে হয় না।
সুজনদাঃ না না কথা ঠিকই বলছো। মেয়ে স্টেজে নেচে বেড়ায়, এত ভাল কথা না। আচ্ছা, লাস্ট কবে পারফর্ম করছে?
আমিঃ এইতো গতকাল এখানে একটা প্রোগ্রাম ছিল। ও পারফর্ম করলোতো। ওই যে, “বাবুরাম সাপুড়ে কোথা যাস বাপুরে” গানটা আছে না? ওই যে, নীলার গাওয়া। ঐ গানের সাথে।
সুজনদাঃ না না। সম্ভব না। প্রোগ্রাম আমরাও দেখি। কিন্তু, এইসব মেয়েরা ভাল হয় না। মানুষ এত কমেন্ট করে, তারপরও......না না।
আমিঃ হুম, সেইটাই।
সুজনদাঃ যাইহোক ভাই। তুমি উপকার করলে অনেক। অন্য কেউ হলে এভাবে হয়তো বলতো না। ভাল করছো।
আমিঃ যা সত্যি, তাই বললাম। এখন এই বিষয়গুলো আপনারা যদি অ্যাক্সেপ্ট করতে না পারেন, তাহলেতো আর সম্ভব না।
সুজনদাঃ হ্যা সেইটাই। আমার বাবা মা কোনদিনও এইটা মানতে পারবে না। মেয়ে গান করতে পারে। এইটা মানা যায়। কিন্তু মেয়ে নেচে বেড়াবে, এইটা মানা সম্ভব না। যাইহোক, ভাল হলো তোমার সাথে কথা বলে। ভাল থাকো তাহলে। আমি একটু বাসায় ফোন দেই। ওকে?
আমিঃ ওকে দা
দা ভাল থাকেন। বাই।
সুজনদাঃ হুম, বাই।

মাথার উপর দিয়ে প্রচন্ড চাপ গেলো আমার। অনেক কষ্টে মাথা ঠান্ডা রেখে কথা বললাম এতক্ষন। তবে ঘেমে গেছি কিছুটা, টেনসন হচ্ছিলো অনেক
চোখে মুখে একটু জল দিয়ে আসা দরকার। আমার আবার দুপুরে ক্লাস। দৌড়াতে হলো ক্লাসে। বিকালের আগে ফ্রি হওয়ার কোন উপায়ই নাই।
ক্লাসে ফোন অফ রাখি আমি। বিকালবেলা, ক্লাস শেষ করে ফোন অন করা মাত্র তনুর ফোন পেলাম।
আমিঃ  হ্যালো?
তনুঃ কি খবর?
আমিঃ এইতো ক্লাস করে ফিরলাম। তোমার
কি খবর?
তনুঃ ভালই। একটু খারাপ অবশ্য। ঐটা ব্যপার না।
আমিঃ খারাপ কেন?
তনুঃ বাসায় ঝারি খেয়েছি।
আমিঃ তাই নাকি? কেন?
তনুঃ ছেলে পক্ষ আমাদের ভার্সিটির কারো কাছ থেকে খবর পেয়েছে যে আমি নাচি, ছেলেদের সাথে বেশি মিশি এই আরকি। তাই তারা আর আমাকে ঘরের বউ করবে না।
আমিঃ ও তাই নাকি?? দারুনতো!
তনুঃ হুমম। বাড়িতে অনেক ঝারি খেলাম। কিন্তু তারপরও, ঝামেলাটাতো গেলো!
আমিঃ সেইটাই। ঝামেলাটা গেলো। ভাল। যে তোমার সম্পর্কে এই সব তথ্য দিয়েছে, তাকেতো থ্যাংক্স না দিয়ে উপায় নাই।
তনুঃ হুমম। তবে, যে বলছে, সে হয়তো খুব রাফ ভাবে বলছে। ছেলের ভাই নাকি বলছে যে, ভার্সিটির ছেলেরা খুব খারাপ জানে এই মেয়েকে।
আমিঃ হুম। কি আর করা। এভাবে না বললেতো আর ছেলে পক্ষ এত তারাতারি রিয়্যাকশন দেখাতো না, তাই না?
তনুঃ তা ঠিক। তবে, যা কিছুই হোক, আমি কালচারাল প্রোগ্রাম ছাড়তে পারবো না।
আমিঃ অবশ্যই না। তোমার পারফর্মেন্স দেখেইতো তোমাকে প্রথম জেনেছিলাম। তোমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। তারপর......
তনুঃ আচ্ছা হয়েছে। ভালবাসায় আর ভাসতে হবে না। তারাতারি পাশ করে একটা চাকরি জোগাড় করেন
না হলে আপনাকে ভাইয়া ডাকা শুরু করতে হবে বলে দিলাম
!
আমিঃ অ্যা!! হ্যা...অবশ্যই অবশ্যই! 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন