শনিবার, ২৮ জুন, ২০১৪

অনুসন্ধান

একাবারেই অগোছালো টেবিলের উপর থেকে ডায়রীটা হাতে নিলাম। কেমন যেন সুখী সুখী একটা গন্ধ পেলাম ডায়রী থেকে। ডায়েরীটা খুলে পড়তে শুরু করলাম। না না, ভাববেন না, অনধিকার চর্চা করছি, আমি তদন্তের দ্বায়িত্বে আছি। আমার অধিকার আছে তদন্তের স্বার্থে এই ঘরের যেকোন কিছু পড়ার বা দেখার।

৫ই জানুয়ারী, ২০১৩ রাত ৯ টা বেজে ৫০
সময়াটা একদম ভাল না। গত সপ্তাহের কথা। আমি বিকালে যখন আসছিলাম, খুব ভিড় দেখে থমকে দাঁড়ালাম। মানুষ ঘিরে আছে কাউকে। আমি ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম কোনমতে। চমকে উঠলাম। এটাতো আমার লিমা! মানুষগুলো কি উজবুক! মেয়েটাকে ঘিরে কি মজা দেখছে? হাসপাতালে নিতে হবে না? আমি সবাইকে ধমকালাম খুব। দ্রুত হাসপাতালে নিলাম লিমাকে। মেয়াটা এখনও হাসপাতালেই আছে। কবে যে ছাড়া পাবে......

৬ই জানুয়ারি রাত ১১ টা বেজে ১৫ মিনিট
লিমাকে দেখতে গিয়েছিলাম আজ। কি আজব ডাক্তারগুলো! কিছুতেই দেখতে দিল না!! কিসব আজগুবি কিছু কথা শোনালো আমাকে! এরা এরকম কেন? আরে যে মেয়েটাকে আমি কয়েকদিন পর বিয়ে করবো, সে আমার দূরের কেউ? আমি গেলে সমস্যা কি?

৭ই জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ১০ মিনিট
মানুষগুলো এরকম করছে কেন? সমস্যা কি এদের? অনেক সহ্য করেছি আর না। চাকরীটা আমি ছেড়ে দেবো। এখানে থাকবো না। লিমাকে সোজা জানিয়ে দিয়েছি। বলেছি, “তুমি এখন সুস্থ। সবাই স্রেফ তোমাকে আমার থেকে দূরে সরানোর জন্য এসব করছে। আমি তোমাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব। এটাই আমার সিদ্ধান্ত।” লিমা কখনও আমার মতের বিরুদ্ধে কিচ্ছু বলে না। বলবে কি, ওর আর আমার মত এত বেশি মেলে যে, বিরুদ্ধে যাওয়ার দরকারই পরে না! যাইহোক, তল্পি তল্পাসহ আমি কাল এখান থেকে চলে যাচ্ছি। কোথায় যাব জানি না। তবে যেখানেই যাই, লিমা আর আমি একসাথেই যাব, এটুকু নিশ্চিত।

১০ই জানুয়ারি সকাল ১০টা বেজে ২০ মিনিটঃ
উফ! যা গেলো আমার আর লিমার উপর দিয়ে! যাইহোক, এখন আর কোণ সমস্যা নাই। আমরা বিয়ে করে ফেলেছি! এর চেয়ে বড় খবর আর কি হতে পারে! আমার ব্যাংকে যে টাকা আছে, সেই টাকার ইন্টারেস্ট দিয়ে দুজনের বেশ চলে যাবে। আর কিছু করার কোন দরকারই নেই। আমরা জীবনটাকে উপভোগ করবো। লিমা এখনও ঘুমাচ্ছে। যাই, ওকে ডাকতে হবে।

 এ পর্যন্ত পড়ার পর আমার কেমন যেন গোলমেলে লাগলো সব।  কিছু ছবি আঁকার চেষ্টা করেছেন ভদ্রলোক। আঁকার হাত একেবারে খারাপ না। মনে হচ্ছে “লিমা” বলে মেয়েটির ছবিই আঁকার চেষ্টা করেছেন তিনি। এরপর আরও পড়লাম কয়েক পাতা। প্রায় প্রতিদিন ডায়রী লিখেছেন তিনি। তেমন কিছুই নেই সেখানে লেখা। এই যেমন

৫ই ফেব্রুয়ারি, রাত ১০ টায় লিখেছেনঃ
আজ ঘুরতে বের হয়েছিলাম আমি আর লিমা। পথে একটা আরেক দম্পতি, সাথে তাদের বেবি। অমনি লিমা বায়না ধরলো, কবে আমাদের এরকম একটা বেবি হবে! কি বলি ওকে? এই সুখের সংসারে বাচ্চার ঝামেলা না নিলেই কি নয়? কিন্তু্‌, যাইহোক, লিমার সাথে আমার দ্বিমত হয়না কখনও। এবারো হবে না আশা করছি। তবে, আমাদের জার্নি বেশ সুন্দর ছিল। ঘুরে অনেক মজা পেয়েছি। মাঝে মাঝে বেরোতে হবে।

আরও কয়েক পাতা পড়লাম। একই রকম কথাবার্তা। আজকের তারিখ পর্যন্ত পড়াটা দরকার। তাহলে একটা কূল কিনারা করা যাবে হয়তো।
ডায়রীর শেষের দিকটা দেখলাম।

২৮ শে সেপ্টমবর রাত ৩ টা বেজে ৪০
লিমা আজ ঘুমাতে এত দেরী করলো! ওর জন্য আমারও দেরী হয়ে গেলো। যাইহোক, একটু লিখেই ঘুমাই।  নাহ, লিখবো না। ভাল লাগছে না। অনেক গুরুত্বপূর্ন আজকের দিনের ঘটনা। কাল লিখবো।

২৯ শে সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টা ২৫
কালকের ঘটনাটা বলি। ইমরান আর আরিফ কোথা থেকে এসে হাজির হলো আমার এখানে ঈশ্বর জানে! তাদের বক্তব্য, আমি নাকি এখানে পালিয়ে আছি! আরে আজব! আমি ওদের লিমার কথা বলিনি যদিও। বললে যদি আবার লিমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে? কিন্তু, ওদের কথা খুব অদ্ভুত। যা বললো, তা লেখার ধৈর্য্য নেই আমার। কিন্তু, মনে হলো, এই দুটো নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে!

এই পর্যন্ত পড়ে নিতান্তই বিরক্ত হলাম আমি। ইমরান আর আরিফ এরা কারা? ইনার বন্ধু??  তারা কি বললো সেটা লেখেনি কেন?? আবার পড়তে লাগলাম।

৩০ শে সেপ্টেমবর রাত ১১ টা বেজে ৫ মিনিট
লিমা আর আমি চিরকাল বাঁচতে পারবো না। এটাতো সত্যি। এই সত্যিকে অস্বীকার করি কি করে? কিন্তু... আমি বুঝতে পারছি না। কেন আজ আমার লিমার উপরে এত রাগ হচ্ছে? আর এই ইমরান আর আরিফ আবার এসেছিল। তাদের সেই কথাগুলো আবার বলতে এসেছে! লিমার সাথে এতদিন আমি এখানে আছি, আর তারা বলছে...? আবারও আমাকে লিমার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা! আমি ঠিক কাজ করেছি। মোটেই অন্যায় কিছু করিনি। কিন্তু, খুব দূর্ঘন্ধ এ ঘরে। ব্যাটারা কি মরেও আমাকে শান্তি দেবে না? লিমার দূর্ঘন্ধ একদম সহ্য হয় না।

এরপরের পাতা। এটাই শেষ পাতা ডায়রীর। কোন তারিখ বা সময় লেখা নেই। কে জানে, এটা হয়তো কাল রাতেই লেখা! গভীর মনযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলামঃ

ইমরান, আরিফ...ক্ষমা করে দিস আমাকে। মাথা ঠিক ছিল না আমার। তবে চিন্তা করিস না। তোদের সাথে দেখা হবে আমার। আজই। আমি আর লিমা তোদের পথেই যাচ্ছি। একটু পরেই।

এবারে সব বুঝতে পারলাম আমি। কোন কিছুই নয়, স্রেফ বদ্ধ পাগল এই লোক। ইমরান আর আরিফকে খুন করেছে নিজেই। তারপর নিজেই গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খুন করেছে লিমাকেও। তবে, সেটা কল্পনায়। কারন, লিমা মারা গেছে ৫ই জানুয়ারী, ২০১৩ তারিখে, অ্যাক্সিডেন্টে। যেদিন থেকে তার এই ডায়রী লেখা শুরু।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন