শনিবার, ২৮ জুন, ২০১৪

নয়নের গল্প

আজকালকার ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা আগেকার দিনের মত নাঅনেক ফাস্ট এবারকার ব্যাচটাও তাই ভর্তি হতে না হতেই ছেলেমায়েরা একসাথে গ্রুপ আড্ডা দেয়া শুরু করেছে সবাই অবশ্য নেই এখানেযারা একটু বেশি ফাস্টতারাই জড়ো হয়েছে আর এই ফাস্ট ছেলেমেয়েদের মাঝে আরো বেশি ফাস্ট নয়ন হাতে গীটার একটু যেন বিরক্ত হলো তমাগীটার দিয়ে মেয়ে পটানোপুরনো টেকনিক তবুও যেন ছেলেটাকে বেশ ভালো লাগছে ওর এই ধরনের চরিত্র ওর বেশ ভালো লাগে আড্ডায় বসতে না বসতেই অমি বলল,”নয়ন কিন্তু অনেক ভালো গীটার বাজায় নয়নধর না একটা গান নয়ন একটুও প্রতিবাদ না করে শুরু করল,
                     “Hello! Is it me, you are looking for?
                         I can see it in your eyes
                         I can see in your smiles……”
মুগ্ধ হয়ে শুনল সবাই বুঝতে কারোর বাকি নেইআগামীদিন গুলোতে কে হতে চলেছে ক্যম্পাসের হিরো সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে তমা ছেলেটার গলা যে এত সুন্দর ভাবতেই পারেনি রবীন্দ্রসংগীত ছাড়া অন্যান্য গান সাধারনত শোনেনা  কিন্তুএই গানটা মনে দাগ কেটে গেল ওর সবচেয়ে বড় আতংকের কথাওর মনে হলো গানটাছেলেটা গানটা ওকে উদ্দেশ্য করেই গাইল!! কেন যেনঅন্যরকম লাগল ওর মুহূর্তের জন্য সবকিছুকে পাল্টে দিতে ইচ্ছে করল তমার আশেপাশের সবকিছুকে ক্ষণিকের জন্য স্বপ্ন ভাবতে ইচ্ছে করলো তাই হয়তসবাই যখন ওকেও গান গেতে অনুরোধ করলতখন  নিজেও কোন প্রতিবাদ না করে গান গেতে শুরু করলযদিও সবার মাঝে এভাবে গান গেতে খুব লজ্জা পায়  তবুওঃ
                  “মায়াবনবিহারিনী হরিনীগহন স্বপন সঞ্চারিনী
                    কেন তারে ধরিবারে করি পনঅকারন…”
অপূর্ব গলা তমার ছোট্ট একটা গান যেন পুরো পরিবেশটাই পালটে দিল গানটা গেতে যেয়ে বড্ড বেশি অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল  মনের ভুলে  কেবল নয়নের চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিল নয়নে নয়নে এমন মিলন কারোরই নজর এড়ায়নি ক্যম্পাসের নতুন হিরো আর হিরোইনের সিনেমার মত সূচনায় সবাই অনেক মজা পেল তমার গানটা শুনে নয়ন মনে হয় একটু বেশি আশাবাদী হয়ে পড়ল ব্যপারটা বুঝতে পেরে বৃষ্টিনয়নকে আরেকটা গান গেতে অনুরোধ করল আর এবার নয়ন শুরু করল,
                “I don’t care, who you are
                Where you from, what you do
                 As long as you love me…!”
 লজ্জায় যেন মাটিতে মিশে গেল তমা আড্ডায় উপস্থিত বাকি সবাই মুখ চাওয়াচায়ি করতে লাগলো নিজেদের মধ্যে যার যা বুঝার তা কিন্তু বোঝা হয়ে গেছেগানে গানে আড্ডা চলল সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা শেষে বিদায় নেয়ার আগে ওরা ওদের সবার ফেসবুক আইডিগুলো নিয়ে নিলকিন্তু নয়ন আর তমার মাঝে কোন কথা হলো না!    
                                     ******************
এরপরের কয়েকমাস ওদের সামনাসামনি কথার চেয়ে ফেসবুকে কথা হলো বেশি নয়ন অনেক স্ট্যাটাস দেয় ফেসবুকে তমা অতটা দেয় না তবে দেখে সবকিছু তমা খুবই চাপা স্বভাবের মেয়ে মেশে সবার সাথেকিন্তু কথা বলে খুব কম ওদের গ্রুপে আরো অনেকে আছেরাব্বিতিথিতনুঅমিসাম্যবৃষ্টি সহ আরো অনেকেই তবে এদের মাঝে নয়নের সাথে একটু বেশি ক্লোজ বৃষ্টি বৃষ্টি মেয়েটা খুব হাসিখুশি যেখানে থাকবে সেখানে সবাইকে মাতিয়ে রাখেবে  কিন্তু তমার সাথে কেউই তেমন ক্লোজ না তারপরও তমা যে নয়নকে একটু হলেও পছন্দ করেএটা বুঝতে পারে বৃষ্টি আর এটা নিয়ে সবসময়  খেপায় নয়নকে আজকালনয়নের আশেপাশে তমা থাকলেইবৃষ্টি গান ধরে, ”এক পলকে ভালোবাসে ফেলেছি তোকে…!!” ফেসবুকে সাধারনত নয়নের স্ট্যাটাসে কোন কমেন্ট করে না তমা তবে বুঝতে পারেবেশিরভাগ স্ট্যাটাসই তমাকে নিয়ে দেয়া আর ওই স্ট্যাটাসে ওদের বন্ধুদের কমেন্টের ছড়াছড়ি চলে সবই দেখে তমাকিন্তু কোন প্রতিবাদ করে না নিজে কখোন কোন ছবি দেয় নাকারোর সাথে ছবি তুলতেও চায় না কেন যে এমন করে কে জানে এভাবেই যায় দিন তবেনয়ন বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে তমাকেএতে কারোর কোন সন্দেহ নেইকিন্তু তমার মনের খবর যে কেউ জানেনা!
                        *****************
     এর মাঝে তমা কয়েকবার নয়নের স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেছে আর তাই দেখে নয়ন নিশ্চিততমা ওকে সত্যিই ভালোবাসে নিজের মনের কথা জানানোর এটাই উপযুক্ত সময় কিন্তু কীভাবে বলবে ওকে সরাসরি কিছু বলার সাহস নেই নয়নের অনেক সাহস সঞ্চয় করে শেষপর্যন্ত তমাকে ফেসবুকেই মেসেজ পাঠালো নয়ন,”ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখ তোমার মনের মন্দিরে…” কোন উত্তর আসলো না ওর এই মেসেজের শেষমেষ বৃষ্টির সাহায্য নিতে হলো বৃষ্টিই তমাকে জানালো নয়নের মনের কথা নয়ন কিন্তু নিশ্চিত ছিলতমা রাজি হবে এটা নিয়ে একটুও টেনসন করেনি  আফসোস একটাইপ্রোপজালটা ওকেই দিতে হলো 
 কিন্তু ফলাফল আসল অন্যরকম বৃষ্টি এসে ওকে জানালোতমা অনেক আগে থেকেই এনগেজডতমার বাবার এক বন্ধুর ছেলের সাথে ওর বিয়ে অনেক আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে!! তাই ইচ্ছা থাকুক আর নাই থাকুককিছুই করার নেই তমার
                          *****************
নয়নকে স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল সবাই মিলে সবাই ওকে অনুরোধ করল একটা গান গাইতেইংরেজি গান কিন্তু নয়ন ধরল রবীন্দ্রসংগীতঃ
                    “সখী ভাবনা কাহারে বলে?
                       সখি যাতনা কাহারে বলে
                       তোমরা যে বল দিবস রজনী
                       ভালবাসা ভালবাসা
                       সখী ভালবাসা কারে কয়?
                       সেকি কেবলি যাতনাময়…… ”
                     নয়নের গলায় এর আগে রবীন্দ্রসংগীত শোনেনি কেউ কিন্তু এই গানটা যেন অন্তর থেকে গাইল  কোন কিছু বলে ওকে স্বান্তনা দেয়ার ভাষা খুজে পেল না কেউ  যাতনা সহ্য করা সত্যিই অনেক কষ্টের মুহূর্তেই জীবন থেকে যেন সবকিছু হারিয়ে গেছে ওর  আর আগের মত কারোর সাথে মেশে নাআর গান গায় নাগীটারে নতুন কোন লিড তোলার চেষ্টাও  করে না  নয়ন আর আগের সেই নয়ন নেই যেন অন্য এক নয়ন
                      *********************
          আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মত নয়নও হয়ত খারাপই হয়ে যেত এই অবস্থায়যদি বৃষ্টি না থাকত ওকে মানসিকভাবে যতটুকু সম্ভব সাপোর্ট দিতে লাগলো বৃষ্টি নয়নের গোমড়া মুখটা  যেন সহ্য করতে পারছিল না তাইনয়নকে প্রতিদিন ফোন দিতে লাগলো  বৃষ্টির মত মেয়ের পক্ষে কোন কিছুই যেন অসম্ভব না নয়নের সমস্ত কষ্ট ভুলিয়ে দিতে চাইল  যেন বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে দিতে চাইল নয়নকে একটা সময় হয়তো সত্যিই স্বাভাবিক জীবনে কিছুটা হলেও ফিরে আসতে শুরু করল নয়ন আর এরকমই একটা সময়ে বৃষ্টিনয়নকে এসএমএস করলঃ
                      “চেয়ে দেখিসনারে হৃদয়দ্বারে কে আসে যায়
                      তোরা শুনিস কানেবারতা আনে দখিণ বায়
                      আজি ফুলের বাসেসুখের হাসে আকুল গানে
                      চির বসন্ত যে তোমারি খোঁজে এসেছে প্রাণে…”
কে সেই চিরবসন্ততুই?” বেরসিক ফিটব্যক নয়নের
ধর তাইসমস্যা আছে?” বৃষ্টির পাল্টা প্রশ্ন
 “যা বলার ঠিক করে বল লুকাবিনা কিছু” খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে এসএমএস করলো নয়ন অনেকটা সময় চুপ করে রইল বৃষ্টি তারপর উত্তর আসল, ””একপলকে ভালবেসে ফেলেছি তোকে” গান আমি তমাকে নাতোকে উদ্দেশ্য করে গাইতামওটাই আমার মনের কথা”!
             বৃষ্টি ভালোবাসে ওকে !! ভাষা হারিয়ে ফেলল নয়ন বৃষ্টি নাযেন একটা ঝর বয়ে গেল ওর উপর দিয়ে কী করবেকী বলবেকিছুই বুঝতে পারল না একটা বারের জন্যও কেন  এই ব্যপারটা ভেবে দেখেনি !!!  
                    **********************
 কথা ছিল নয়ন আর তমা হবে ক্যাম্পাসের সেরা জুটিকিন্তু হলো নয়ন আর বৃষ্টিবৃষ্টি আর নয়নের প্রেম দেখে মুগ্ধ সবাই!! নয়ন যেন ফিরে পেয়েছে নিজেকে ওরা দুইজনই হাসিখুসিপ্রাণচঞ্চল সবসময় তারা মেতে আছে নিজেদের নিয়ে
                     “প্রেমেরও জোয়ারেভাসাবে দোহারে
                       বাঁধন খুলে দাওদাও দাও
                       ভুলিব ভাবনাপেছনে চাব না
                      পাল তুলে দাওদাওদাও……”
             কিন্তুকোথাও যেন কিছু একটা নেই নয়ন পুরোপুরি ফিরে পায়নি নিজেকে এত কিছুর মাঝেও বৃষ্টি বুঝতে পারে  যতই ভালোবাসুক নয়নকেতমা নয়নের মনে যে জায়গা করে নিয়েছেতা পূরন করা ওর পক্ষে সম্ভব না নয়নের বৃষ্টির সাথে প্রেম শুধুমাত্র তমাকে ভোলার চেষ্টাযা অসম্ভবতাহলেকী করবে বৃষ্টি???
                                  *************
 বৃষ্টি কতটুকু ভালোবাসত নয়নকেতা বলা কঠিন সে আসলে কোন চোখে দেখত নয়নকে তাও অস্পষ্ট সেকি নয়নকে শুধুই বন্ধু ভাবতচেষ্টা করেও কি এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারেনিশুধুমাত্র তমার অভাব পূরন করার জন্যই কি  এতকিছু করেছিলতা না হলেকেন শুধুমাত্র নয়নের মুখের দিকে তাকিয়েচারটা বছর ধরে চেষ্টা করেতমার বাসার সবার সাথে কথা বলেসবাইকে রাজি করিয়েতারপরতমাকেও কনভিন্স করেনয়ন আর তমার বিয়েটা ঠিক করেই ছাড়ল????

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন