সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

কে কার অনুপ্রেরণা ?

আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি ছাত্র খারাপ ছিলাম না ক্লাস এইটে বৃত্তি পেয়েছিলাম কিন্তু ক্লাস টেনে উঠার পর, পড়াশোনায় কেমন যেন একটা ঘাটতি তৈরী হলো ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো হলো না মনটা খারাপ ছিল অনেক যাইহোক, আমাদের বাসার ঠিক বিপরীতে যে বাসা, সেখানে থাকতো তিথি নামে একটা মেয়ে বিথি (ছদ্মনাম) আমার ক্লাস নীচে পড়ে অনেক ভাল ছাত্রী আর এত সুন্দরী মেয়ে ওই এলাকায় আর খুব বেশি ছিল না তারউপর খুব বেশি পড়ুয়া মেয়ে সে ওদের বাসাটা ছিল তিনতলা নিজেদেরই বাড়ি কিন্তু আমি জানতাম না, বাড়িটার কোন তলায় থাকতো ওরা
   যাইহোক, সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষার আর বেশি দেরী নেই আমার মাথার উপর চাপটা তখন অনেক বাশি আমার একটা দোষ ছিল, আমি রাত জাগতে পারতাম না বারোটা না বাজতেই আমার ঘুম পেত তো, একদিন রাতে, সোয়া বারোটার দিকে, আমি যখন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় দেখতে পেলাম বিথিদের বাড়ির দোতলার সামনের রুমটায়, লাইট জ্বলছে বুঝতে বাকি রইল না, ওটাই বিথিদের বাসা এতরাতে লাইট জ্বলছে, তার মানে সে লেখা পড়া নিয়ে ব্যস্ত আমার জুনিয়র পড়ে ক্লাস নাইনে আর আমি পড়ি ক্লাস টেনে আমার পড়ালেখার অবশ্যই ওর চেয়ে বেশি তারপরও মেয়েটা আমার চেয়ে বেশি লেখাপড়া করছে! একটু মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম
 
পরের দিন রাতে আবার দেখলাম, দোতলার ঘরে লাইট জ্বলছে আজ আমার একটু জেদ হলো আমি চিন্তা করললাম, একটু বেশি রাত জাগব পরেরদিন আমার প্রাইভেট সকাল সাতটায় আমদের পড়া শুরুর ঠিক আগে, অর্থাৎ ভোড় ছয়টায় বিথিরা পড়ে নিজেকে বোঝালাম,”বিথী তোমার জুনিয়র ওর এখন পড়ার চাপ কম আর তুমি এখন ক্লাস টেনে তোমার কাল সকালে প্রাইভেট আছে কিন্তু, ওর প্রাইভেটতো তোমারও আগে! যদি এখনও না ঘুমায়, তাহলে তুমি এখনি ঘুমাবে কেন?” ঠিক কথা!! আমি জেগে রইলাম রাত ১টা.৩০টা……২টা…….১৫টা………নাহ আর পারছি না ঘুমে দুই চোখ বন্ধ হয়ে আসছে কিন্তু হার মানতেও ইচ্ছে করছে না দিব্যি দেখতে পাচ্ছি লাইট তখনো জ্বলছে রাত আড়াইটার দিকে, আমি হার মানতে বাধ্য হোলাম মাশারি টাঙিয়ে কেবল আমার রুমের লাইট অফ করেছি, সাথে সাথে দেখতে পেলাম, বিথিদের বাসার লাইটও অফ হয়ে গেল!!! মেজাজটা অনেক খারাপ হলো আরেকটু ওয়েট করলেইতো পারতাম!! কিন্তু, সেইসাথে এও মনে হলো, আমি যেমন বিথিকে ফলো করছিলাম, বিথিও কি আমাকে ফলো করছিল??
যাইহোক, এরপর আমাদের পরীক্ষা শুরু হলো দীর্ঘদিন ধরে চললো পরীক্ষা বিথির অনুপ্রেরণাতেই কিনা জানিনা, আমি প্রতিদিন রাত জেগে পড়তে লাগলাম পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে, একদিন নতুন এক স্যারের কাছে পড়তে গেছি বিকালবেলা স্যার ছিলেন খুব রসিক প্রকৃতির মানুষ স্যার হঠাত করে আমাকে বললেন, ”অমিত, কত রাত পর্যন্ত পড়? তোমার নামেতো অনেক রকম খবর পাচ্ছি!!” আমি শুনে আকাশ থেকে পরলাম! স্যার বলছে কি এসব? অবাক হয়ে স্যারকে বললাম,”এইতো স্যার, দুইটা...ম্যক্সিমাম আড়াইটা কেন স্যার?” স্যার তখন বলতে শুরু করলেন,”আমার কাছে নাইনের এক মেয়ে পড়ে, নাম অনামিকা বলে,”স্যার, টেনে অমিতদা আছে না? উনি না, রাত দুইটা...আড়াইটা পর্যন্ত পড়ে!” আমি বললাম, “তুমি কীভাবে জানলে? তোমার বাড়ি কই, আর অমিতে বাড়ি কই? তুমি কি অমিতের বাড়ি গেছিলে নাকি? মেয়ে বলে,”না স্যার, আমিতদাদের বাসার সামনে বিথিদের বাসা, বিথি আমাকে বলছে দেখছে অমিতদাকে অনেক রাত পর্যন্ত পড়তে!” একটানে বলে স্যার থামলেন বিথি আমাকে চেনে!!!!!!!! আবার ফলোও করে!!!!!!! আমি যেন আকাশ থেকে একদম প্যারাসুট ছাড়া পরলাম!! কোনরকমে বললাম, “স্যার, বিথিও অনেক রাত পর্যন্ত পড়ে স্যার হাসতে হাসতে বললেন, “বিথি কত রাত পর্যন্ত পড়ে, সেইটা তুমি জানলে কীভাবে?” এবার আমি একটু লজ্জাই পেলাম বললাম, “ওদের বাসায় অনেক রাত পর্যন্ত লাইট জ্বলতে দেখিতো স্যার এবার মুখের এমন ভাব করলেন, আমি আর না হেসে পারলাম না

টেনসন বেড়ে গেল কিন্তু ওইদিন রাতেই ঘটল এক আজব ঘটনা রাত দশটার দিকে, স্পষ্ট দেখতে  পেলাম বিথিকে! পড়ছে বসে বসে কিন্তু ওকেতো দেখতে পেলাম নীচতলায়!!! অনেক রাত জেগে পড়লো কিন্তু আমিতো এতদিন দোতলায় আলো জ্বলতে দেখতাম!! ব্যপারটা ঠিক বুঝলাম না এর আগে আমি ওকে সরাসরি দেখিনি কিন্তু এখন দেখছি তবে, পরেরদিন জানতে পারলাম, বিথিরা নীচতলায়ই থাকে দোতলায় না আর এর পরে বুঝতে পারলাম পুরো ব্যপারটা
 
আসল ঘটনা হলো, বিথিদের বাসার দোতলায় ভাড়া থাকে অন্য একটা পরিবার তারাই আলো জ্বালিয়ে রাখতো। আর তা দেখে আমি ভাবতাম বিথি পড়ছে!! আর এই দেখেই আমি অনুপ্রাণীত হয়ে পড়ালেখা করেছি রাত জেগে!
কিন্তু...
এখন যে বিথি রাত জেগে পড়ছে, সেটা কার অনুপ্রেরণায়? আমার? কে যে কাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে!!!!!
                                                    

                                            ***

অনেকদিন পরের কথা, আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষ একদিন রাতে আমাদের বাসার পাশের মাঠে খেলাধূলা করছিলাম বাবা আর মা বাইরে ছিল রাত দশটার দিকে বাসায় এসে জানতে পারলাম, বাসায় যখন কেউ ছিল না, তখন নাকি বিথির মা এসেছিলেন আমাদের বাসায়!!! কিন্তু কেন এসেছিলেন তা আমার মা বলতে পারল না টেনসন হলো খুব অনেক কথা মনে হলো দিনের পর দিন রাত জেগে পড়তাম ফলাফল, টেস্টে অনেক ভালো রেজাল্ট করলাম তবে বিথিকে দেখতাম মাঝে মাঝে, পড়ার ফাঁকে ফাঁকে বিথিও আমাকে দেখত মনে হতো একদিন দেখেছিলাম বিথির মাও আমাকে দেখছে!! যতদূর জানি, বিথির মা এই এলাকার বেশ ডাকসাইটে একজন মহিলা! তার মেয়ের দিকে কেউ তাকালেও তিনি ছেড়ে কথা বলেন না আজ উনি আমাকে কী বলতে এসেছিলেন আমাকে কে জানে!
 খুব দুশ্চিন্তার ধ্য দিয়ে রাতটা কাটলো পরেরদিন বিকালে রাস্তায় হঠাত দেখা বিথির মা সাথে আমাকে দেখেই বিথির মা বললেন, ”অমিত, দাঁড়াও আমার মেয়ের একটা উপকার করতে পারবা? তোমারতো পরীক্ষা শেষ, তোমার সব নোটখাতাগুলো আমার বিথিকে একটু দিতে পারবা? আমি আজ রাতে বিথিকে নিয়ে তোমাদের বাসায় আসবো!!!”
 
শেষ পর্যন্ত বিথি আর বিথির মা আসলেন আমাদের বাসায় আমি যে চেয়ারে বসে লেখাপড়া করি সেই চেয়ারে বসলো বিথি কথাও হলো ওর সাথে, নিজেদেরই বাসায় বসে!!!
                                                            
                                                                                              
                                                                        


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন