সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

টিপিক্যাল

ছুটির দিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে সারাটা দিন কেটেছে  বঙ্কিম রচনাবলী পড়ে আর এই সন্ধ্যাবেলায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনে যত বৃষ্টির গান লিখেছেন সব শুনছি একটানা সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলছে নিজের মত আলোআঁধারী একটা অবস্থা ইজি চেয়ারে এককাপ কফি হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির শব্দ শুনছি সেই সাথে খুব লো ভলিউমে চলছে রবীন্দ্রসংগীত যেন সপ্নময় একটা অবস্থা!
   ঘোরের ধ্যে ছিলাম হয়তো তেপ্পান্ন বছর বয়সী এই আমার মনটা যেন তে বছরের মত হয়ে গেছে! যাইহোক, চমক ভাংলো কলিংবেলের শব্দে একা থাকি, সাবধান না হয়েতো উপায় নেই তাই জোড়ে বললাম, ”কে?” আমি রিফাতউত্তর লোডাক্তার সাহেব! গরীবের ঘরে হাতির পাড়া!!”  বলেই দরজা খুললাম দেখলাম, রেইন কোট পরে দাঁড়িয়ে রিফাত অন্ধকারের মাঝে একেবারেই অন্যরকম লাগছে ওকে ভেতরে নিয়ে আসলাম তাড়াতাড়ি একটা টাওয়েল দিলাম মাথা মোছের জন্য কিছুটা যেন রাগ নিয়েই বলল রিফাত,” হাতির পাড়া মানে কী আমিতো প্রতি সপ্তাহেই আসি।” আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে গেলাম ওর জন্য কফি বানাতে ফিরে এসে দেখি, টেবিলের উপর রবীন্দ্রসংগীতের নতুন একটা অ্যালবাম রাখা রিফাতই এনেছেআরে দারুনতো থ্যাংকস লট আমি কপি করতে দেই অ্যালবামটা বলেই ওর উত্তরের অপেক্ষা না করে কপি করতে দিয়ে দিলাম
রিফাতঃ কপি হতেতো সময় লাগবে

আমিঃ কপি হোক ততক্ষণ তুই কফি খা! আর হ্যা, আর একটা কাজ করা যেতে পারে

রিফাতঃ কী?
আমিঃ আমরা গল্প বলা খেলতে পারি আমি একটা গল্প বলবো, তারপর থেকে তুই বোলবি, তারপর আবার আমি বলবো, এইভাবে সুন্দরভাবে টাইম পাস হয়ে যাবে নে, তুই শুরু কর

রিফাতের চোখের দিকে তাকালাম একটু যেন অন্যরকম লাগলো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুরু করল;
রিফাতঃ একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালবাসতো, যখন সে স্কুলে পড়ত, তখন থেকেই
আমিঃ নাম কী ছেলেটার?

রিফাতঃ নাম? ধর, রাকিব

আমিঃ  ওকে নে এবার বলতে থাক আর ইন্টারফেয়ার করবো না

রিফাতঃ  টিন এজে কিন্তু এরকম হতেই পারে মেয়েটা রাকিবের চেয়ে বয়েসে ছোট কিন্তু বুদ্ধি হয়তো বেশি ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে রাকিবের সাথে মেয়েটার অ্যাফেয়ার হয় কিতু দূর্ভাগ্য রাকিবের অ্যাফেয়ারটা টেকে না মেয়েটা কোন এক অজুহাতে ওকে ছেড়ে চলে যায় ওই বছর কোথাও চান্স পেল না রাকিব হয়তো মনের কষ্টেই! কিন্তু পরের বছর সে ঠিকই সরকারী মেডিক্যালে চান্স পায় কিন্তু, জীবনের সবচেয়ে বড় ইচ্ছেটা পূরন হলেও মনের মাঝে একটা শূন্যতা থেকেই যায় নে, এবার তুই বল

আমিঃ রাকিবের মনের এই শূন্যতাটুকু পূরন করা হয়তো কোনভাবেই সম্ভব ছিল না কিন্তু, কোন কোন সময় মানসিক আঘাত মানুষকে নতুন মাত্রা দেয় মনটাকে বড় করে দেয় রাকিবের বেলায়ও তাই হলো যেকোন মেয়ের সাথে মিশতে তার আর সংকোচ হয় না  তারই কোন এক ক্লাসমেটের সাথে তার তৈরী হলো সুন্দর একটা সম্পর্ক মেয়েটার নাম......হমম...মেয়েটার নাম ধর,......তপা! রাকিব কিন্তু জানত, তপার আগে বয়ফ্রেন্ড ছিল, কিন্তু এখন নেই আর তপাও জানত রাকিবের জীবনের প্রথম ভালবাসার মানুষটার কথা যাইহোক, তারা  যেন জুটি হয়ে গেল তাদের মেডিক্যাল কলেজের তাদের ধর্মটা ছিল আলাদা; আর তাই হয়ত নিঃসংকোচে মিশত তারা তারপরও অনেকে ভাবত তাদের অ্যাফেয়ার আছে! কিন্তু, তারা জানতো তারা শুধুই বন্ধু!

রিফাতঃ  শুধুমাত্র, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে যদি খুব বেশি ক্লোজলি মেশে, তাও আবার অনেকদিন ধরে, তাহলে তাদের বন্ধুত্বটা কি শুধুই বন্ধুত্ব থাকে? থাকে না একটা সময় রাকিব বুঝতে পারে, তার এই বান্ধবীটা তার প্রতি কিছুটা উইক! আর সেইসাথে এটাও বুঝতে পারে যে, সে এই মেয়েটার প্রতি আরো বেশি উইক!! ব্যাপারটা হয়তো সে কোনদিন বুঝতনা, যদি না ওর ছোটবেলার এক বন্ধুর সাথে তপার খুব ক্লোজ রিলেশনের কথা রাকিব না জানত আর বলব না, তুই শুরু কর

আমিঃ আমি? আচ্ছা ঠিক আছে তপার সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল অন্য যে ছেলেটার তার নাম......তার নাম......ধুর ছাই কোন নামইতো মাথায় আসে না!

রিফাতঃ নিজের নামটাই বলে দে!

 আমিঃ না, নিজের নাম বলবো না! ওকে, দিব্য দিব্য আর রাকিব ছোটবেলায় অনেক ভাল বন্ধু ছিল আর এখন এক জায়গায় না থাকলেও তপা আর দিব্যও অনেক ভালো ফ্রেন্ড রাকিব; অপা...স্যরি তপা আর দিব্যর বন্ধুত্বের কথা জানতো, কিন্তু জানতো না কতটা ঘনিষ্ট তারা কিন্তু একটা সময়  জানলো আর, জানতে পেরেই হয়ত রাকিব প্রথমবারের মত নিজের উইকনেসটা বুঝতে পারে, নিজেরই বন্ধুর প্রতিই তীব্র হিংসা থেকে!!

রিফাতঃ কিন্তু লাভ নেই রাকিব আর তপার ধর্ম এক না তাই, রাকিব যখন বুঝলো, দিব্য আর তপা শুধুই বন্ধু, তখনো স্বস্তি পেলনা এতটুকু নিজেকে খুব বেশি টিপিক্যাল মনে লো রাকিবের কিন্তু, সে জানতো, এটাই প্রকৃত ভালবাসা তার প্রথম ভালবাসার ঘটনাটা  আসলে বয়ঃসন্ধিক্ষণের  বিভ্রান্তি ছাড়া অন্য কিছুই নয়। সত্যিকারের ভালবাসা বলতে যা বোঝায় তা সে তপাকেই বাসে। আর তাই সিধান্ত নিল এমন কিছু  করার যাতে, নিজেকে অন্তত এই বলে স্বান্তনা দিতে পারে যে, সে আর সবার মত না। সে টিপিক্যাল না
আমিঃ কিন্তু রাকিব জানত না দিব্যও কতটা উইক এই তপার প্রতিই দিব্য জীবনে এর আগে কোন মেয়ে আসেনি তাই তপা প্রভাবটা হয়ত অনেক বেশি ছিল দিব্য উপরে যদিও দিব্য  কোনকিছুই প্রত্যাশা করেনি তপার কাছে কিন্তু রাকিবের মত দিব্যও নিজেকে আর পাঁচটা ছেলের চেয়ে আলাদা মনে করত আর তাই নিজের ভালবাসার প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল, সে চিরকুমার থাকবে!

রিফাতঃ রাকিবও একই কাজ করল বিয়ে করল না দিব্যও করল না দুজনই প্রমান করল, তারা টিপিক্যাল না কিন্তু যাকে নিয়ে এত কিছু, সেই তপা কিন্তু ঠিকই বিয়ে করে সুখী হলো

আমিঃ তাই? অপা সুখে আছে? কীভাবে জানলি?

রিফাতঃ জানব না কেন? একই হসপিটালে জব করি না? কথা না বললেও রোজইতো দেখা হয় দিব্যি ভাল আছে

আমিঃ গতকাল দেখা হয়েছিল?

রিফাতঃ হ্যা দেখলামতো

আমিঃ কোন চেঞ্জ দেখিসনি? ভাল করে ভাব ভেবে বল

রিফাতঃ আমমমম......একটু যেন চেঞ্জ মনে হয়েছিল কিছু একটা যেন নেই কিন্তু ধরতে পারিনি, কী নেই সে যাইহোক, আমি কখনও ভাবিনি এই মেয়েটা এতটা টিপিক্যাল হতে পারে অনেক ডিফরেন্ট মনে হয়েছিল ওকে আমার! আমার মনে হতো, অন্যরকম কিছু করবে এই মেয়েটা!

আমিঃ রিফাত, মিও বিশ্বাস করতে পারি না, অপা এতটা টিপিক্যাল আমি কাল ওর ফেসবুকের প্রোফাইল ইনফো তে গিয়ে ওর রিলেশনশীপ স্ট্যাটাসটা দেখলাম কী দেখলাম জানিস?

রিফাতঃ কী দেখলি?

আমিঃ তার আগে মনে করে বল,  তুই কাল যখন ওকে দেখলি, ওর কপালে সিঁদুর আর হাতে শাখা ছিল?
রিফাতঃ মাই গড!!!!! এইবার মনে পড়ছে! শাখা, সিঁদুর ছিলনাতো! তাই অন্য রকম লেগেছে! ওর হাজবেন্ডের কিছু হয়নিতো? কী ছিল ওর রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস?

আমিঃ ডিভোর্সড!!!!

                                                    
 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন