বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০১৪

অষ্টমী পূজার ব্যতিক্রমী সকাল

                                           

শারদীয় দূর্গা পূজাটা এবার একেবারেই অন্যরকমভাবে কাটছে আমার সেটা অবশ্য অন্য ব্যপার তবে আজ সকালে একটু অন্যরকম ভাবনা মাথায় খেলা করছিল ব্যপারটা খুলেই বলি
     আজ সকালেও অন্যান্য বছরের অষ্টমীর দিনগুলোর মত উপবাস থেকে গিয়েছিলাম মন্ডপে পূজা দিতে বগুড়ার জ্বলেশ্বরীতলা কালী মন্দিরে আজ সকালে স্বাভাবিকভাবেই ছিল বেশ একটা সাজসাজ রব পূজা শেষে, প্রথমে মহিলারা অঞ্জলী দিলেন তারপর আমরা, মানে ছেলেরা তারপর ক্রমেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে আমি আমার মা জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম প্রায় আড়াই ঘন্টা বসেছিলাম একাই; আসলে, বগুড়ায় অল্পদিন হলো এসেছি, তার উপর পড়াশুনা করছি বাইরে আর আমিতো একটু বেশিই ঘরকুনো তো বসে বসে দেখছিলাম সবাইকে পূজার মন্ডপে মহিলাদের উপস্থিতি সবসময়ই বেশি কারনটা আমি ঠিক বুঝি না ছেলেদের কি ধর্ম কর্মে মন কম??
     বসে থাকতে আমার বিরক্ত লাগছিল না জায়গাটা অবশ্যই আর পাঁচটা পাবলিক প্লেসের মত নয় একসাথে এতগুলো মানুষ প্রত্যেকের পরণে আছে পরিষ্কার নতুন কাপড় তারা সবাই এসেছে পুজো দিতে এক জায়গায় এতগুলো মানুষ, কিন্তু বলা চলে তাদের কারোর মনেই কোন অন্যায় চিন্তা নেই ভাবতে ভালোই লাগে
      আমি বসে বসে দেখছিলাম সবাইকে আবার ভাববেন না, আমি বসে বসে মেয়ে দেখছিলাম!! আসলে আর কিই বা করার ছিল আমার? দেখছিলাম আর মনে মনে গল্প বানাচ্ছিলাম সবাইকে নিয়েই গল্প বানাচ্ছিলাম একসময় দেখলাম দুইজন মেয়ে ঢুকল মন্ডপে তাদের মাঝে একজন বিবাহিত অপরজনের  মধ্যে যে ব্যক্তিত্ব, তা চোখে পড়ার মতই তারা পুরোটা সময় একসাথে ছিল আমি গল্প বানাতে শুরু করলাম  সম্ভবত তারা দুইবোন মেয়েটি এসেছে তার দিদির সাথে হয়তো সে পড়শোনা করে বাইরে কোথাও হয়তো পড়শোনায় সে অনেক ভাল তার চশমাটা দেখে মনে হচ্ছিল ছোটবেলা থেকেই সে ওটা ব্যবহারে অভ্যস্ত আর তার দিদির বিয়ে হয়েছে মাত্র কয়েক বছর হলো দিদিকে খুব মিস করে সে পূজার ছুটিতে বাসায় আসার জন্য গত প্রায় একমাস ধরে এই দিনগু্লোর জন্যই অপেক্ষা করে ছিল সে দিদিকে পেয়ে খুব খুশি সে এরপর বাসায় গিয়ে হয়ত তারা দুইজন ঝাঁপিয়ে পড়বে কাজে অনেক আত্মীয়-স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধুরা আসবে অবশ্য এই মেয়েটার বন্ধুতো দূরের কথা, সম্ভবত বান্ধবীও খুব কম অত্যন্ত পারসোনালিটি সম্পন্ন এই মেয়েটাকে বখাটে ছেলেরা  উত্তক্ত করার সাহসই হয়তো পায় না দূর্ভাগ্যবশত আমার কোন বোন নাই তবে নিশ্চিত, আমার বোন থাকলে তাকে আমি এমন পারসোনালিটি সম্পন্নই বানাতাম, মানে বানিয়েই ছাড়তাম!!
            আমি কোন গল্পকার নই তাই কাহিনী জমল না গল্প বাদ দিয়ে নিজের কথা ভাবতে শুরু করলাম ওদের দুইজনকে দেখে মনে মনে শ্রদ্ধা জাগছিল আমার মনে হচ্ছিল, মেয়েদের এমনই হওয়া উচিত
           কিন্তু মেজাজটা হঠাতই খারাপ হয়ে গেল যে বলছিলাম, এখানেসবাই এসেছে পুজো দিতে একজায়গায় এতগুলো মানুষ, কিন্তু বলা চলে তাদের কারোর মনেই কোন অন্যায় চিন্তা নেই”, এই চিন্তাটা ভুল প্রমানিত হল আমি বসেছিলাম কয়েকটা অল্প বয়েসী ছেলের পেছনে মেলায় হাতেগোণা কয়েকটা ছেলে ওখানেই আছে ছেলেগুলোকে দেখলাম, যে মেয়েটার কথা এতক্ষণ বলছিলাম, তার ছবি তুলার চেষ্টা করছে!! পেছনে ছিল পুলিশ তারপরও দেখলাম তারা চেষ্টা করছে পারেনি অবশ্য তবে তাদের এই চেষ্টা দেখে এতই রাগ হলো আমার, যে কি আর বলব মন্ডপে আরো অনেক মেয়ে ছিল তারাতো কম সুন্দরী নয় অথচ এই মেয়েটা কি শ্যামলা খুব সুন্দর সে নয় তবুও একেই কেন.........? হয়তো মেয়েটার পারসোনালিটির কারনেই তার আশেপাশে ঘ্যাঁষার সাহস পাচ্ছিল না তাই.........
   তারা সফল হতে পারেনি ছবি তুলতে সফল হলে আমি এর একটা প্রতিবাদ করতাম যদিও আমি সেখানে নতুন, কিইবা করতাম? অষ্টমী পূজার পবিত্র সকালটা আমার কাছে আর পবিত্র মনে হলো না
        বেলা প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে পূজার প্রসাদ নিয়ে আমি আর মা মন্ডপ থেকে বেড়িয়ে রিক্সায় উঠলাম দেখলাম, দুইজনও বের হয়ে আসছে মন্ডপ থেকে দুইজন একসাথে হাটতে হাটতে এগোতে লাগলো রাস্তা দিয়ে আমার মনে হলো, এই মুহূ্র্তে ওরাই এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ, অথচ শত্রুর অভাব নেই আশেপাশে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন